কদিন আগে এই দলটাই ভারতের কাছে হেরে হইচই ফেলে দিয়েছিল। হোক না বয়সভিত্তিক দল, কিন্তু ফুটবলে আর্জেন্টিনার হার ভারতের কাছে! বড় খবর তো অবশ্যই। আর্জেন্টিনার ফুটবল আর কত নিচে নামবে, এ-ই যখন আলোচনার মিছিল, সেই সময়ে সুখবর দিল সেই অনূর্ধ্ব ২০ দলটাই। কাল স্পেনে রাশিয়াকে হারিয়ে কোতিফ কাপ জিতল আর্জেন্টিনা। যোগ সময়ের গোলে আর্জেন্টিনা জিতেছে ২-১ ব্যবধানে।
আর্জেন্টিনাই আগে পিছিয়ে পড়েছিল। ১১ মিনিটে ইগর দিভিভের গোলে। কিন্তু ফাকুন্দো কলিদিদো তিন মিনিটের মধ্যেই সমতা ফেরান। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে দুই দল আর গোলের দেখা পায়নি। এক সময় তো মনে হচ্ছিল ম্যাচ পেনাল্টি শ্যুটআউটে গড়াবে। সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা টাইব্রেকারেই উরুগুয়েকে হারিয়ে উঠে এসেছিল ফাইনালে।
কিন্তু ৯১ মিনিটে আলান মারিনেল্লির গোল শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন করে দেয় আর্জেন্টিনাকে। জাতীয় দলের ভারপ্রাপ্ত কোচ লিওনেল স্কালোনির নেতৃত্বে এই টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছিল আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের পর হোর্হে সাম্পাওলিকে এই দলটার দায়িত্ব দিতে চেয়েছিল আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থা (এএফএ)। টুর্নামেন্টটা খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। বয়সভিত্তিক ফুটবল নিয়ে এএফএ নড়েচড়ে বসেছে।
স্পেনে প্রতি বছর এই টুর্নামেন্ট হয়ে আসছে ১৯৮৩ সাল থেকে। এক সময় বড় বড় ক্লাবগুলোও অংশ নিত। রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, ভ্যালেন্সিয়া এই শিরোপা ঘরেও তুলেছে। টুর্নামেন্টটা একটু অদ্ভুত ধাঁচের হতো। ক্লাব ও জাতীয় দল খেলত একই সঙ্গে। ২০০১ সালে যেমন ব্রাজিলের ক্লাব সাও পাওলো জিতেছিল এই ট্রফি। পরের বছর জিতেছিল ব্রাজিল! ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে অবশ্য বরাবরই তাদের বয়সভিত্তিক দল পাঠিয়েছে এই টুর্নামেন্টে। ক্লাবগুলোও তা-ই।
ফলে ২০১৬ সাল থেকে সিদ্ধান্ত হয়, বিভিন্ন দেশের অনূর্ধ্ব ২০ দল কেবল এতে অংশ নিতে পারবে। ক্লাব ও জাতীয় দলের মিশ্র টুর্নামেন্টটি হবে শুধু মেয়েদের বেলায়। মেয়েদের কোতিফ কাপ যেমন এবার জিতেছে স্প্যানিশ ক্লাব লেভান্তে।
বড় টুর্নামেন্ট, তবে ততটা বড় তো নয়। কোতিফ কাপ নিয়ে এবারই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে যা একটু আলোচনা হচ্ছে। ভারতের কাছে আর্জেন্টিনার হার এর একটি বড় কারণও। তবে আর্জেন্টিনা এই সাফল্যকে দুহাত পেতে নিচ্ছে। ২০১২ সালে আর্জেন্টিনা প্রথমবার এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছিল।
আর্জেন্টিনার এই টুর্নামেন্ট গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ, বয়সভিত্তিক ফুটবলেও খরা চলছিল তাদের। যুব বিশ্বকাপে রেকর্ড ছয় বার শিরোপা ঘরে তোলা আর্জেন্টিনা সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০০৭ সালে। কয়েক বছর আগে বিভিন্ন ক্লাবের খেলোয়াড় রপ্তানিতে ব্রাজিলের মতো দেশকে ছাপিয়ে যাওয়া আর্জেন্টিনা আবার প্রতিভা সংকটে পড়েছে। উল্টো দিকে ব্রাজিল থেকে উঠে আসছে একের পর এক প্রতিভা। এবারের দলবদলে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে ব্রাজিলের ফুটবলাররাই। ২০১৮ সালে বার্সেলোনাই দলে ভিড়িয়েছে তিনজন ব্রাজিলিয়ানকে।
অন্ধকার ভবিষ্যৎ আর্জেন্টিনাকে বাধ্য করেছে নতুন করে ভাবতে। এএফএর নতুন প্রধান ক্লদিও তাপিয়া বয়সভিত্তিক ফুটবলে সবচেয়ে জোর দিচ্ছেন। সাম্পাওলিও বয়সভিত্তিক ফুটবল নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করার কথা বলেছিলেন।
সূত্র, প্রথম আলো